শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ, নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা

বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ, নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা

প্রচণ্ড গরমের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখন ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েই চলেছে। ডায়রিয়া প্রতিরোধে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে খাবার পানির সাথে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সকল এলাকায় ডায়রিয়ার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শিশু ও নারীরাও। সময়মতো চিকিৎসা না দিতে পারলে এটি মারাত্মক হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের ডায়রিয়া প্রতিরোধে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা। কেননা বড়দের চেয়ে শিশুদের শরীরের কোষের বাইরের পানি বা এক্সটা সেলুলার ফ্লুইড বেশি থাকে। ফলে ডায়রিয়া হলে সহজেই তাদের শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। পানিশূন্যতা তীব্র হলে শিশু অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। কখনো কিডনী বিকল হতে পারে।

আইসিডিডিআরবি’র সূত্রমতে, সম্প্রতি যে সংখ্যক ডায়েরিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যাই বেশি। গরমকালে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। ঠিকভাবে পানি ও লবণ পূরণ করা হলে, এটি কখনো গুরুতর আকার ধারণ করে না। বেশিরভাগ ডায়রিয়া এমনিতেই সেরে যায়। কিন্তু ডায়রিয়া হলে ওরস্যালাইন খাওয়া, এমনকি এর চিকিৎসা নিয়ে এখনো রয়ে গেছে কিছু ভুল ধারণা।

বিশেষজ্ঞদের মতে উচ্চ রক্তচাপ আছে, এমন রোগীরা ডায়রিয়ার আক্রান্ত হলে ওরস্যালাইন খেতে বিভ্রান্তিতে ভোগেন। কেননা, স্যালাইনে লবণ আছে, তাদের আশঙ্কা ওরস্যালাইন খেলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। এটি ভুল ধরাণা। প্রতিবার পাতলা পায়খানার সংগে শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। তা যথাযথভাবে পূরণ করা না হলে, রোগীর পানিশূন্যতা, লবণশূন্যতা এমনকি রক্তচাপ কমে গিয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে, মৃত্যুও হতে পারে। ওরস্যালাইনে চিনি বা গ্লুকোজ থাকে, তাই ডায়েবেটিস রোগীরা খেতে ভয় পান।

অনেকে মনে করেন, ওরস্যালাইন খাওয়ার পরে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ওরস্যালাইনে যে সামান্য চিনি বা গ্লুকোজ আছে, তা অন্ত্রে লবণ শোষণের কাজে ব্যয়িত হয়। সুতরাং ডায়রেরিয়ার সময় ডায়েবেটিস রোগীরা নিশ্চিন্তে ওরস্যালাইন খেতে পারবেন।

স্যালাইন কতোটুকু খেতে হবে তা নির্ভর করবে কতবার পাতলা পায়খানা হচ্ছে বা কতটুকু পানি হারাচ্ছেন তার ওপর। ডায়রিয়ার কারণে একজন মানুষ মাত্র কয়েক ঘণ্টায় এক থেকে দেড় লিটারের বেশি পানি হারাতে পারেন। সহজ কথা হলো, প্রতিবার পায়খানা হওয়ার পর স্যালাইন খাওয়া এবং অল্প করে সারা দিন বারবার খাওয়া। এর বাইরে সারাদিন পানি ও তরল খাবার যেমন-স্যুপ, ডাবের পানি ইত্যাদি খেতে হবে। অনেক সময় ফুড পয়জনিংয়ের কারণে বমি বা পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। মানুষ স্বভাবতই ফার্মেসি থেকে বমি বা পাতলা পায়খানা দ্রুত বন্ধের জন্য ওষুধ খান, যা একেবারেই ঠিক নয়। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ খাওয়া ঠিক না, কারণ পয়জনিংয়ের ক্ষেত্রে বরং কিছু সময় বমি ও পাতলা পায়খানার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ পয়জন বের হয়ে যায়। সব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়েটিক ওষুধ খাওয়া জরুরি নয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজন দেহের লবণ ও পানিশূন্যতা পূরণ করা। দরকার হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী বারবার পাতলা পায়খানা করার ফলে শরীর থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। এর ফলে রোগী পানি শূন্য হয়ে পড়ে। সে কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়া শুরু হলে আধা সের/লিটার বিশুদ্ধ পানিতে এক প্যাকেট খাবার স্যালাইন ভালোভাবে মিশিয়ে রোগীকে খাওয়াতে হবে। বয়স দুই বছরের নিচে হলে তাদের প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ১০ থেকে ২০ চা চামচ, দুই বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৪০ চা চামচ করে যতবার পাতলা পায়খানা হবে ততবারই খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। যে কোনো ওষুধ এবং পানের দোকানেও আজ খাবার স্যালাইনের প্যাকেট পাওয়া যায়। বানানো খাবার স্যালাইন ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত খাওয়ানো যায়। এরপর প্রয়োজন হলে আবার নতুন করে খাবার স্যালাইন বানাতে হবে। শিশুর ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ বেশি করে খাওয়াতে হবে। এছাড়া বড়দের স্বাভাবিক সবধরণের খাবার খাওয়াতে হবে। তবে তরল জাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ভাতের মাড়, ডাবের পানি, চিড়ার পানি, লবণ-গুড়ের শরবত, খাবার স্যালাইন, বিশুদ্ধ খাবার পানি খাওয়াতে হবে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য পৃথক ইউনিট খোলা হয়েছে। সেখানে রোগীদের বিশেষভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

বন্যা ও বর্ষণ জনিতরোগ সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বর্তমান মৌসুমে আমাদের দেশে সাধারণত তিন মাস থেকে ১২ বছরের শিশুরা ডায়রিয়া, কলেরা, জ্বর, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, আমাশয় ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়। কারণ একদিকে আবহাওয়ার পরিবর্তন, অন্যদিকে অপ্রত্যাশিত বন্যা ও বর্ষণ। নিম্ন আয়ের পরিবারের লোকদের মধ্যে এ রোগ বেশী হয়ে থাকে। অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার কারনে গরিব মা-বাবা শিশুদের প্রতি যত্নে দায়িত্বশীল হতে পারেন না। সঠিক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারে না। ফলে মারা যায় অনেক শিশু।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, হাত না ধুয়ে কোনো কিছু খেলে বা বাসি, পঁচা খাবার খেলেও ডায়রিয়া হতে পারে। অনেকেই ওয়াসার সরবরাহকৃত লাইনের পানি পান করে। পানির মাধ্যমে ডায়রিয়ার জীবাণু বেশি ছড়ায়। তাই পানি ফুটিয়ে পান করা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। আবার কেউ-কেউ রাস্তা-ঘাটে খোলা খাবার এবং শরবত খেয়েও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। বারবার পাতলা পায়খানা হলে, বমি হলে, ঝুঁকি না নিয়ে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগীকে ভর্তি হতে হবে।

ডায়রিয়া একটি সাধারণ রোগ। আজকাল ডায়রিয়া বা কলেরায় মৃত্যুর হার খুবই কম। কিন্তু আক্রান্ত হলে মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে, কার্যক্ষমতা কমে যায়। তাই সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যমেরও উচিত ডায়রিয়া প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং টাটকা খাবার খেতে হবে। পঁচা ও বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। বাজারের খোলা খাবার খাওয়া যাবে না। বৃদ্ধ ও শিশুদের প্রতি বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে। এ সময় শিশু ও বৃদ্ধদের আটসাট পোশাক না পরে ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। পোশাক সুতির হলে বেশি ভালো হয়। মনে রাখতে হবে ’প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর’।

সূত্র : বাসস

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877